দ্বীপ বললে ভুল বলা হবে, কেননা সুকাত্রা দ্বীপপুঞ্জ আরব সাগরের চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত, যেগুলোর বেশিরভাগ অংশই পড়েছে ইয়েমেনের ভেতরে। এর রাজধানীর নাম হাদিবু। সুকাত্রা দ্বীপটি এত বিচিত্র যে এর উদ্ভিদ জীবনের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি স্থায়ী, যার অর্থ এটি পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায় না। এই জন্য সুকাত্রাকে ভারত মহাসাগরের গ্যালাপাগোস বলা হয়।সোকাত্রা দ্বিপটি কয়েক লক্ষ বছর ধরে কোনও বৃহত্তর ভুখনড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যে কারণে এটি এখন জীববৈচিত্র্যের এক বিস্ময়কর স্থান। এই অনন্য বৈচিত্র্য সুকাত্রাকে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দ্বীপ হিসাবে পরিণত করে। চলুন জেনে নেয়া যাক সুকাত্রা দ্বীপ সম্পর্কে।

সুকুত্রা আরব সাগরের মাঝে অবস্থিত। ভৌগলিক পরিবেশ এবং গাছপালার অদ্ভুত দর্শনের কারণে এই দ্বীপকে ভিনগ্রহবাসীদের দ্বীপ বাএলিয়েন দ্বীপবলা হয়ে থাকে।  চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত সুকাত্রা দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা ইয়েমেনের। ইয়েমেন ২০১৩ সালে দ্বীপটিকে একটি প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করে। এটা হর্ন অফ আফ্রিকা থেকে ২৪০ কিলোমিটার  পূর্ব এবং আরব উপদ্বীপ থেকে ৩৮০ কিলোমিটার  দক্ষিণে অবস্থিত।

,৭৯৬ বর্গ কিলোমিটার ভূমি বিশিষ্ট দ্বীপপুঞ্জ দৈর্ঘ্যে ১৩২ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৫০ কিলোমিটার।

প্রথম শতকে গ্রিকদের পদচারণা হয়েছিল এই সুকাত্রা দ্বীপমালায়, যা প্রস্তর খন্ডে প্রাপ্ত ভাষার ব্যবহার এবং একটি কাঠের চাকতি দেখে ধারণা করা হয়। আরো ধারণা করা হয়, তৃতীয় শতকের দিকে এই দ্বীপটি প্রাচীন যুগের ব্যবসায়ের মূল কেন্দ্র ছিল। গ্রিকদের পদচারণায় এ দ্বীপমালার সূচনা হলেও ‘সুকাত্রা’ নামটি গ্রিক শব্দ নয়, বরং সংস্কৃত শব্দ সুখাদ্রা থেকে এর উৎপত্তি, যার অর্থ সহায়ক বা স্বর্গসুখ প্রদানকারক।

২০০১ সালে একটি প্রজেক্টে বেলজিয়ামের একদল স্পেলিওলজিস্ট (যারা গুহা বা অন্যান্য বস্তুর গাঠনিক প্রক্রিয়া, বয়স ইত্যাদি ব্যাখ্যা করেন) এই সুকাত্রা দ্বীপে ‘হালাহ’ নামক একটি গুহার মতো গঠন খুঁজে পান যেটির গভীরতার মোটামুটি ভালই। এছাড়াও বেশ কিছু ফলক, পাথর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু খুঁজে পান তারা। পরবর্তীতে গবেষণা করে তারা জানান, সেগুলো প্রথম থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ের এবং আরব সাগর পাড়ি দেবার সময় হয়তো নাবিকেরা দ্বীপে এগুলো ফেলে গিয়েছেন। শুনলে অবাক হতে পারেন, প্রস্তর লেখাগুলোর ভেতরে ভারতীয় ব্রাহ্মলিপিও পাওয়া গিয়েছে! মার্কো পোলোর  দ্য ট্রাভেলস অফ মার্কো পোলোবইয়ে সুকাত্রা দ্বীপের উল্লেখ আছে। যদিও কোথাও বলা নেই তিনি সেখানে অবস্থান করেছিলেন বা গিয়েছিলেন, কিন্তু দ্বীপটি সম্পর্কে পোলো জানিয়েছেন।

উদ্ভিদগুলোর অদ্ভুত গড়নই এই দ্বীপকে ভিনগ্রহীদের দ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করার মূল কারণ। দ্বীপের বেশিরভাগ উদ্ভিদই স্থায়ী। পৃথিবীর অন্য কোথাও এগুলোর দেখা মেলে না। সুকাত্রা দ্বীপে ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩০৭টি প্রজাতিই স্থানীয়, অর্থাৎ প্রায় ৩৭ শতাংশ উদ্ভিদ পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে না। ২০০৪ সালে I UCN এর লাল তালিকায় সুকাত্রার ৩টি অতিবিপন্ন এবং ২৭টি বিপন্ন উদ্ভিদের নাম রয়েছে।

এই দ্বীপের সবচেয়ে অদ্ভুত গাছ হলো ড্রাগন-ব্লাড ট্রি। অদ্ভুত গড়নের ছাতাকৃতির এই গাছটি থেকে লাল বর্ণের আঠালো পদার্থ বের হয়। কথিত আছে বহুকাল আগের ড্রাগনের রক্ত থেকে এই গাছের উৎপত্তি এবং সে অনুযায়ী এর নামকরণ! এই গাছের আঠা রঙ তৈরিতে এবং বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত হয়।

মোট ৩১ প্রজাতির প্রাণির দেখা মেলে এই দ্বীপে, যার ৯৪ শতাংশ  স্থানীয়। স্কিংস, পা-বিহীন টিকটিকি, নানা প্রকারের মাকড়শা এবং তিন প্রকারের বিশুদ্ধ পানির কাঁকড়ার দেখা মেলে দ্বীপে। স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে বাদুড় ছাড়া আর কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব মেলে নি।

সুকাত্রা দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী মানুষেরা মাছ ধরে, পশুপালন করে এবং খেজুর চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। দ্বীপবাসীরা প্রধানত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং তারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও পালন করে থাকেন।

সোকোত্রার বিমানবন্দরটি ১৯৯৯ সালে নির্মিত হয়েছিল . সোকোত্রা ভ্রমণের আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত; বাকি মাসগুলিতে সাধারণত ভারী  বৃষ্টিপাত হয়, যা পর্যটকদের জন্য  অসুবিধা সৃষ্টি করে; বিমানের ফ্লাইট গুলিও সাধারণত বাতিল হয়ে যায় এই দ্বীপে কোনও সুপ্রতিষ্ঠিত হোটেল নেই, যদিও ভ্রমণকারীদের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের সময় থাকার জন্য কয়েকটি অতিথিঘর রয়েছে। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া ইয়েমেনী গৃহযুদ্ধের কারণে, সোকোত্রা দ্বীপে ভ্রমণ প্রভাবিত হয়েছে।

সুকাত্রার আকর্ষণীয় স্থান গুলোর মধ্যে ক্যালেন্সিয়াল বিচ, সোয়াব বিচ, ডেলিশা বিচ, আর্হের বিচ,  ওয়াদি দিরহার, স্কন্দ পিক উল্লেখযোগ্য।

 

 

Post a Comment

0 Comments